ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন: বিএসএফ-এর উদ্যোগে মৃত ভারতীয় পিতাকে শেষবারের মতো দেখল বাংলাদেশী কন্যা
পারফেক্ট টাইম নিউজ : ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মানেই শুধু কাঁটাতার আর কড়া পাহারা নয়, মানবিকতারও এক উজ্জ্বল উদাহরণ। বুধবার, এমনই এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনার সাক্ষী থাকল দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ৬৭নং ব্যাটালিয়নের মুস্তাফাপুর সীমান্ত ফাঁড়ি। বিএসএফ-এর মানবিক উদ্যোগে এক বাংলাদেশী কন্যাকে তার প্রয়াত ভারতীয় পিতাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দেওয়া হলো। এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল যে, সীমান্তরক্ষী বাহিনী কেবল দেশের সুরক্ষাই করে না, বরং মানুষের আবেগ এবং মানবিক চাহিদার প্রতিও তারা সমান সংবেদনশীল।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ভারতের বাঁশঘাটা গ্রামের বাসিন্দা জুব্বার মণ্ডলের মৃত্যুতে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে মুস্তাফাপুর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে একটি বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়। মৃতের মেয়ে, মিট্টু মণ্ডল, যিনি বাংলাদেশের যশোর জেলার বেনাপোলের বাসিন্দা এবং বাবলু মণ্ডলের স্ত্রী, তার পিতার শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন। যেহেতু দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন, তাই পরিবারের পক্ষ থেকে সীমান্তে এই শেষ দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। এই অনুরোধ পাওয়ার পর বিএসএফ-এর ৬৭নং ব্যাটালিয়ন এক নজিরবিহীন মানবিক সিদ্ধান্ত নেয়। তারা তৎক্ষণাৎ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)-এর সাথে যোগাযোগ করে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

এই সহযোগিতার ফলস্বরূপ, মৃত জুব্বার মণ্ডলের মেয়ে মিট্টু মণ্ডলকে জিরো লাইনে, অর্থাৎ দুই দেশের সীমানার ঠিক মাঝখানে, তার পিতার মরদেহ দেখার এবং শেষ শ্রদ্ধা জানানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এই আবেগঘন মুহূর্তে মিট্টু মণ্ডল এবং তার পরিবারের সদস্যরা চোখের জলে তাদের প্রিয়জনকে বিদায় জানান। সীমান্তের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিএসএফ এবং বিজিবি জওয়ানরাও এই দৃশ্যে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কাঁটাতারের বিভাজন সত্ত্বেও, মানবিকতার এক অদৃশ্য সেতু যেন সেই মুহূর্তে দুই পরিবারকে, এবং দুই দেশকে, একসূত্রে বেঁধে দিয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে, মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে বিএসএফ এবং বিজিবি-এর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। তারা বলেন, “বিএসএফ কেবল সীমান্ত রক্ষা করে না, বরং তাদের মানবিক দিকটিও আজ আমাদের কাছে স্পষ্ট হলো। তাদের এই উদারতা আমরা কোনোদিন ভুলব না।”

এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে যে, বিএসএফ কেবল সামরিক শক্তি বা কঠোর নিরাপত্তার প্রতীক নয়, বরং তারা দেশের মানুষের প্রতি সংবেদনশীল এবং যেকোনো মানবিক প্রয়োজনে তারা পাশে দাঁড়াতে সর্বদা প্রস্তুত। এই ধরনের উদ্যোগ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং সৌহার্দ্যকে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা করা যায়। বিএসএফ-এর এই মানবিক পদক্ষেপ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল, যা সকল ভারতবাসীকে গর্বিত করবে।







