অনুষ্ঠিত হল গোবরডাঙ্গা রূপান্তরের নাট্যসন্ধ্যা
নীরেশ ভৌমিক : ‘গোবরডাঙ্গা রূপান্তরের নাট্যসন্ধ্যা’ অনুষ্ঠিত হল গত ১১ই আগষ্ট, ২০২৪ বিকেল ৫.৩০ মিনিটে, গোবরডাঙা সংস্কৃতি কেন্দ্রে। গোবরডাঙ্গা রূপান্তর আয়োজিত নাট্যসন্ধ্যায় সংস্থার আজীবন সভাপতি প্রয়াত মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণে প্রারম্ভিক পর্ব শুরু হয়।
সঞ্চালক মালা গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, গোবরডাঙ্গা পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপ্রধান সুভাষ দত্ত মহাশয়। উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিরা।
শ্রী সুভাষ দত্ত মহাশয়কে পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণে মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক ও বিভিন্ন সামাজিককাজে আন্তরিক আগ্রহও ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেন, এবং প্রয়াত সুকুল বন্দ্যোপাঠ্যার স্মরণিকা (পুস্তিকা) প্রকাশ করেন। শ্রী সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্মৃতিচারণায় দাদার প্রতি প্রদ্ধা জানান।
এই পুস্তিকায় যারা স্মৃতিচারণ করে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন, এই সভায় উপস্থিত প্রত্যেককেই স্মরনিকা (পুস্তিকা) প্রদান করা হয়। দীর্ঘদিনের পথ চলার সাথী-শ্রীশশাঙ্ক দত্ত মহাশয় স্মৃতিচারণ করে তাঁর প্রিয় মুকুন্দা কে’ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানান।
এদিন দ্বিতীয় পর্বের প্রথমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিসর্জন’ অবলম্বনে রূপান্তরের নাট্যগুরু শ্রদ্ধেয় শ্রী শ্যামল দত্ত মহাশয়ের ভাবনা ও প্রয়োগে গোবরডাঙ্গা রূপান্তরের নিজস্ব প্রযোজনা ‘আত্মাহুতি’ মঞ্চস্থ হয়।” দেবতার নামে মনুষ্যত্ব হারায় মানুষ “। সন্তানহীন রাজমহিষীর সন্তান আকাঙ্খা, দেবীর নিকট পশুবলির বিনিময় সন্তান প্রার্থনা ।
রাজা গোবিন্দমানিক্যের বলি নিষেধের নির্দেশ । নির্দেশের বিরুদ্ধেশরাজপুরোহিত রঘুপতির ষড়যন্ত্র উদ্ভাবন । শেষে অন্ধ ধর্মবিশ্বাস ও কুসংস্কারের রক্তপিপাসার প্রতি জয়সিংহের আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে নাটকের সমাপ্তি।
অভিনয়ে : রঘুপতি- স্বরূপ দেবনাথ, গোবিন্দ মানিক্য- সুবির নারায়ন দাস, জয়সিংহ- অভিক দাঁ, নয়ন রায় – চন্দন দেবনাথ, মন্ত্রী- গৌতম দাস, নক্ষত্র রায়- তাপস দাস, গুনবতী- লিণা দাস অপর্ণা- অর্পিতা পাল , সকলের যথাযথ চরিত্র চিত্রণে এবং অভীক দাঁর রূপটান, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ ।
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের আবহ প্রক্ষেপণ, দেবদত্ত কর্মকার ও স্বরূপ দেবনাসের মঞ্চ ভাবনা এবং সৌম্যহরির আলোর যাদুতে, এই নাটকটির উপস্থাপনায় প্রতিটি দর্শকের হৃদয়ে যে আবেশ তৈরী হয় তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে- তুমুল করতালির মাধ্যমে।
এই দিনের দ্বিতীয় নাটক গয়েশপুর মঞ্চসেনার প্রযোজনায় শিবংকর চক্রবর্তীর নাটক ‘ন হন্যতে’। গণতন্ত্রের এক প্রধান স্তম্ভ হ’ল সাংবাদিকতা। স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম যে কোনও প্রশাসনকে দিশা দেখায়। অথচ আজ ক্ষমতাসীন শাসকদল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনপ্রকার সমালোচনা শুনতে প্রস্তুত নয়। তাই যে কোনও মূল্যে তারা আজ সংবাদ মাধ্যমকে কিনে নিতে চায়।
চায় একমাত্র তাদের অনুমোদিত খবর যেন সংবাদ মাধ্যম প্রচার করে। কিন্তু যেসব সাংবাদিক বা সংবাদ মাধ্যম নিজেদের কলম বিক্রি করতে অস্বীকার করে, প্রশাসনের কোনও স্তরেই নিরাপত্তার কোনও আশ্বাস না পাওয়া সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থান বজায় রেখে ক্ষুরধার কলম সমাজ সচেতনতার কাজে ব্যবহার করে – তারা স্বার্থান্বেষীদের দ্বারা নানাভাবে আক্রান্ত হয়, নিগৃহীত হয় এমনকি নিহত হয়।
ফুরায় যা তা ফুরায় শুধু চোখে ব্যক্তি মানুষকে হয়তো হত্যা করা যায়, কিন্তু তার ত্যাগ, তিতিক্ষা, লড়াই বৃহত্তর মানব সমাজের মনোজগতে বেঁচে থাকে চিরকাল।মিহির শুর মহাশয়ের পরিচালনায় এবং নাটকটির উপস্থাপনা দর্শক প্রশংসিত হয়।