আপোসহীন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, আপনার এলাকার টাটকা সংবাদ পরিবেশনে সর্বদা দায়বদ্ধ।

অনুষ্ঠানআন্তর্জাতিকউৎসবপ্রতিভার সন্ধানেবিনোদনসর্ম্বধনাসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠিত হল নাট্যসংস্থা ‘রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ’ আয়োজিত আন্তর্জাতিক জিল নাভারের সেমিনার

পারফেক্ট টাইম ওয়েব ডেস্ক : অনুষ্ঠিত হল নাট্যসংস্থা ‘রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ’ আয়োজিত আন্তর্জাতিক জিল নাভারের সেমিনার। নাট্যচর্চা এবং সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল দমদমদের স্বনামধন্য নাট্যসংস্থা ‘রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ’। গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার তাদের নিজস্ব মঞ্চ ‘আয়না ঘর’-এ আয়োজিত হলো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাটককার ও নির্দেশক জিল নাভারের একটি গভীর অন্তর্দৃষ্টি-ভিত্তিক সেমিনার। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যতাত্ত্বিক ও নির্দেশক ড. দানী কর্মকার। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের সংলাপ আমাদের থিয়েটারের বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আন্তর্জাতিক মঞ্চের সঙ্গে ভারতীয় নাট্য ঐতিহ্যের মিলন আমাদের ভাবনাকে আরও সমৃদ্ধ করে।’ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই সংস্থা নিয়মিত আন্তর্জাতিক মানের ভাবনার আদান-প্রদানের মঞ্চ তৈরি করে আসছে।অনুষ্ঠানের শুরুতে নাট্যসংস্থার পক্ষে সমীর কর্মকার জিল নাভারকে সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় প্রদান করেন। পাশাপাশি ড. দানী কর্মকার তাঁর তিনটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘থিয়েটার এবং সেক্সুয়ালিটী’, ‘পিটার ব্রুক: শূন্য মঞ্চের পথিকৃৎ’, এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল চিল্ড্রেন থিয়েটার: প্রবন্ধ ও নাটক’—উপহার দেন জিল নাভারকে।

নাভার, যিনি ১৯৯০ সাল ধরে পন্ডিচেরির অরোভিলকে নিজের নাট্যচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন, ৩০টিরও বেশি সফল প্রযোজনা করেছেন। সেদিন তাঁর সেমিনারের মূল ভাবনা ছিল একজন অভিনেতার নিজের ভিতর থেকে চরিত্রের সত্যতা ও প্রাণ খুঁজে বের করার প্রয়াস। সেমিনারে নাভার ব্যাখ্যা করেন, একজন অভিনেতার কাজ শুধু সংলাপ মুখস্থ করা নয়, বরং ‘কেন’ ও ‘কোথায়’ এই দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া – এটাই চরিত্র নির্মাণের প্রথম ধাপ। তিনি বলেন, নিজের ভিতরে যা খুঁজে পাবেন না, তা দিয়ে আসল চরিত্র গঠন সম্ভব নয়। তিনি তাঁর নির্দেশনার পদ্ধতিও ব্যাখ্যা করেন—রিহার্সাল কেবল পুনরাবৃত্তি নয়, এটি একটি আবিষ্কারের স্থান, যেখানে শিল্পী আবেগ, ভাষার সুর এবং মঞ্চজ্ঞান অর্জন করেন। তিনি আরও বলেন, আয়না ঘরে এসে আমি এক অনন্য অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি।

সেমিনার শেষে দর্শকদের সঙ্গে একটি মুক্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপস্থিত নাট্যপ্রেমীরা প্রশ্ন করেন অভিনয়ের পদ্ধতি, নাট্যকৌশল এবং থিয়েটারের রাজনৈতিক সম্ভাবনা সম্পর্কে। পরে, রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ উপস্থাপন করে ‘তোমারই জয়’ নামক একটি নাট্যকোলাজ, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’ ও ‘বিসর্জন’ নাটকের অংশবিশেষ মঞ্চস্থ হয়। এছাড়াও পরিবেশিত হয় বিভাবনের নাটক। এই সেমিনারটি প্রমাণ করে রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ কেবল একটি নাট্যসংস্থা নয়, বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক নাট্যচেতনা তৈরির মঞ্চ। পূর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপালের মতো দেশ থেকেও শিল্পীরা এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন। বাইরে যখন বর্ষার বাদল, ভিতরে তখন থিয়েটারের আলোয় আলোকিত এক সন্ধ্যা, সৃজন, বিনিময় আর নতুন নাট্যভাবনার জন্মক্ষেত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও দর্শক ও নাট্যপ্রেমীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *