উৎসবজেলার খবরবিনোদন

ঠাকুরনগরে অনুষ্ঠিত হল সৃজন উৎসব – ২০২৪

নীরেশ ভৌমিক : প্রায় তিন তিনটি দশক ধরে নিরবিচ্ছিন্ন সাংস্কৃতিক চর্চা
অতি নিষ্ঠার সাথে‌ করে চলেছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঠাকুরনগর এলাকার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি সংস্কৃতিক সংস্থা। তাঁদের আয়োজনে সম্প্রতি ১৫,১৬,১৭ মার্চ ঠাকুরনগর ফুটবল খেলার মাঠে তিন ধরে‌ হয়ে গেল বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- ‘সৃজন উৎসব ২০২৪’। যার শুভ সূচনা হয় ১৫মার্চ, উদ্বোধক ছিলেন শ্রী আশীষ গিরি, ডিরেক্টর- ইজেডসিসি, উদ্ভোধন পর্বে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব, গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ণ এর নাট্য নির্দেশক শ্রী আশিস চট্টোপাধ্যায়, উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য সমালোচক ও ‘এই সময়’ পত্রিকার সাংবাদিক শ্রী বিপ্লব কুমার ঘোষ, উৎসবে উপস্থিত ছিলেন গাইঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার মাননীয় শ্রী রাখহরি ঘোষ। মাননীয় শ্রী রাখহরি ঘোষ মহোদয় গাইঘাটা থানা ও বনগাঁ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিধ্বনির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনির এই তিন দশক ধরে সাংস্কৃতিক চর্চার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনগুলোতে প্রতিধ্বনির এই ধরনের কার্যক্রমে গাইঘাটা থানা তাদের পাশে থাকবে তার প্রতিশ্রুতিও দেন।

মাননীয় শ্রী আশীষ চট্টোপাধ্যায় ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনির সৃজন উৎসবের অন্যতম অতিথি এবং উদ্বোধক ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ঠাকুরনগরের প্রতিধ্বনির সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক তার উল্লেখ করেন, তাদের নাট্য ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক চর্চার বহর ও মানের প্রশংসা করেন। প্রশংসা করেন ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি র সাম্প্রতিক কয়েকটি নাট্য প্রযোজনার এবং অতি সম্প্রতি ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনির প্রযোজনা নাট্য-‘ফেলে আসা মেগাহার্টজ’ এর জাতীয় নাট্য বিদ্যালয় এর ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর বৃহত্তম নাট্য উৎসব ‘ভারত রং মহোৎসব’এ প্রর্দশনের সুযোগ করে নেওয়ার জন্য। সৃজন উৎসবের মঞ্চে শ্রী আশীষ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প অবলম্বনে অনুষ্ঠিত হয় নাট্য- ‘তারা প্রসন্নের কীর্তি’, প্রযোজনায়- গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ন। শিল্পায়ন প্রযোজিত ও শ্রী চট্টোপাধ্যায় নির্মিত প্রযোজনাটি প্রয়োগ বিন্যাসে অভিনবত্বের ছাপ রেখেছে,নাট্যটি নিটোল, নির্মেদ এবং যার মঞ্চ, আলো, আবহসহ একটি অনন্য সুন্দর ও দর্শকের কাছে অত্যন্ত মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে।

উৎসবের অন্যতম প্রধান অতিথি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও নাট্য সমালোচক শ্রী বিপ্লব কুমার ঘোষ ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনির ব্যবস্থাপনা,এই প্রয়াস এবং প্রায় তিনটি দশক ধরে মফস্বলে দাঁড়িয়ে নাট্য চর্চার যে ধারাবাহিকতা তার উচ্চসিত প্রশংসা করেন। উপস্থিত দর্শক সমাবেশেরও তারিফ করেন। এতদিন প্রতিধ্বনির কথা শুনে থাকা,আর এবার তার কিঞ্চিত শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও প্রতিধ্বনির ডাকে আসতে পেরে এবং প্রতিধ্বনির কাজ কে চাক্ষুষ করতে পেরে তিনি ভীষণ খুশি তার কথা উল্লেখ করেন। কলকাতা থেকে অনেক দূরে সীমান্তবর্তী এরকম একটি মফস্বলে দাঁড়িয়ে, ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি, যে মানের কাজ করে যাচ্ছে তার জন্য তিনি ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি ও তার লড়াকু নেতৃত্বকে ও সৈনিকদের বাহবা-কুর্নিশ জানান। উদ্বোধন পর্বের অনুষ্ঠানের শেষে ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি, ‘প্রতিধ্বনির স্মারক সম্মান-২০২৪ প্রদান করেন এলাকারই ‘বাংলার লোক প্রিয় লোকশিল্প যাত্রা শিল্পী তথা নাট্য শিল্পী-মাননীয় শ্রী তপন কুমার দত্ত’ মহাশয়কে। ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি দীর্ঘদিন ধরে, বৃহত্তর ঠাকুরনগর এলাকার সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে অনন্য কৃতিত্বের অধিকারীদের ‘প্রতিধ্বনি স্মারক সম্মাননা’ প্রদান করে আসছেন।এ বছর তারা এই প্রথিতযশা নাট্য ব্যক্তিত্বকে স্মারক সম্মান প্রদান করেন।

আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে জানান সত্তর উর্ধ্ব তপনবাবু এখনো যাত্রা ও নাট্যমঞ্চের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে চলেছেন, অবিরাম দাফিয়ে অভিনয় করে চলেছেন। এ প্রজন্মের কাছে তিনি অনুপ্রেরণা থাকবেন। শ্রী তপন কুমার দত্ত এই সম্মাননা গ্রহণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, তার অভিনয় পরিক্রমা বিষয়ক কয়েকটি কথা স্মরণ করেন, পরিশেষে ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনির উচ্চ প্রশংসা করেন। তিনি প্রতিধ্বনি সম্পর্কে স্বপ্ন দেখতেন যে, এই সংস্থাটি জেলা থেকে রাজ্য-রাজ্য থেকে দেশে-এমনকি বিদেশেও এর সুখখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে,আর তার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করে তাঁর পুলকতা প্রকাশ করেন। কেননা ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি নাট্য প্রযোজনা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা পরিক্রমা করার সুযোগ পেয়েছে, পেয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম নাট্যোৎসব ভারতরঙ্গ মহোৎসবে প্রদর্শন করার সুযোগ যার মধ্য দিয়ে এই সংস্থাটির কথা দেশের সংস্কৃতি জগতে পৌঁছে গেছে এবং এই প্রযোজনাটি এবং তাঁর নির্মাতা দলটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের যাওয়ার ডাক পেয়েছে, এটাই তাঁর স্বপ্ন পূরণ কথা। উদ্বোধন পর্বের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সভাপতি মাননীয় শ্রী জয়দেব হালদার।

২৯ বছর ধরে প্রতিধ্বনি সাংস্কৃতিক সংস্থা সাংস্কৃতিক চর্চায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষের যে ঐকান্তিক সহযোগিতা এবং পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রতিধ্বনি তার যে কার্যক্রম নিয়ে নিজের এলাকার ছাড়িয়ে, নিজের জেলার ছাড়িয়ে, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশে এবং দেশের সীমানাও অতিক্রম করে বিদেশ বিভূইতে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে তা উল্লেখ করেএবং তার উত্তরণ জারি রাখার জন্য অঙ্গীকার রেখে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধন পর্বের পরেই শুরু হয় একটি উদ্বোধনী নৃত্য অসাধারণ কোরিওগ্রাফি, সঙ্গীতের বিষয়, ভাবনা-প্রয়োগ-আঙ্গিক উপস্থাপনা-অনবোধ্য নৃত্যশৈলী যা দেখে অতিথিদের বলতে শোনা যায় এই একটি উপস্থাপনাই প্রতিধ্বনির জাত চিনিয়ে দেয়! উদ্বোধনী নৃত্যটির পরিচালনায় ছিলেন শ্রীমতি মাম্পি দাস পাল। এরপর উপস্থাপিত হয় প্রতিধ্বনি পরিচালনাধীন নৃত্যশিক্ষা কেন্দ্রের খুদে শিশু কিশোরদের নৃত্যানুষ্ঠান। অসংখ্য, অসংখ্য শিশু! রঙ-বেরঙ এর আলো আঁধারিতে তাদের কোনো নাচ দেখে মনে হয়েছে সৃজন উৎসব মঞ্চে কোনোটাতে শরৎ এর শিউলি ফুলেরা আবার কোনোটাতে বসন্তের রঙিন ফুলেরা নেচে বেড়াচ্ছে! এরপর পরিবেশিত হয় গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ণ এর নাট্য।

সৃজন উৎসবের প্রথম দিন শেষ হয় সংস্থার বড়দের সৃজনশীল ব্যালে নৃত্য এর মাধ্যমে। দ্বিতীয় সন্ধ্যায় প্রথমেই ছিল সংস্থার নিজস্ব প্রয়োজিত ও বাংলা থিয়েটারের এ প্রজন্মের তরুণ প্রতিভাময় নাট্য ব্যক্তিত্ব শ্রী ভাস্কর মুখার্জি নাটক-নির্দেশিত, নাট্য- ‘ফেলে আসা মেগাহার্টজ’ এর ২৭ তম প্রর্দশন। ভীরে ঠাসা দর্শকাসন উপছে পড়েছে,অনেক নাট্য প্রিয়বন্ধু ১.৩৫ মিনিটের গোটা নাটক টা দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন। অনেক অনেক দর্শক দু-চারবার দেখার পর আবারও দেখবে বলে ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। সম্পূর্ণ অনুকুল পরিবেশ না থাকলেও দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শক বন্ধুদের ভালো লাগার বিষয়টি আটকে থাকেনি, তারা ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনির প্রয়োজনাটি ভালো হয়েছে এটা শুনেছে কিন্তু নাট্য প্রদর্শনটি দর্শন করার পর তাদের যতটা ভালো ভেবেছিল তার থেকেও অনেক অনেক বেশি ভালো লাগার অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। নাটকের মুখ্য চরিত্র ‘আমি’ র‌ ভূমিকায় রাজু ধর অসাধারণ,অসম্ভব ভালো অভিনয় করেছে। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে রিমিল সেন, সৌম্যজিৎ দাস, ছোট ‘আমি’র চরিত্রে অলীক সাহা, গৌরাঙ্গ মন্ডল, সুশান্ত বিশ্বাস, সন্তু, তন্ময়,গোপাল, রুমকি,বিপাশা, শ্রীতমা, অনিশারা নিজ নিজে ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবলীল, আর ‘টিম ওয়ার্ক’ এই নাটকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। বন্ধু সমরের চরিত্রে অভিনেতা সুদীপ ধারা জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছে। নাটক শেষে অনেককেই সুদীপের সাক্ষাৎ পেতে ছুটে বেড়াতে দেখা গেছে। এই প্রযোজনা টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে তবুও ভাস্কর মুখার্জির শিল্প নৈপূন্যতা, নাট্য মেধা,যতটুকু লেখা হয়েছে তা অবশ্যই অনেক অনেক কম লেখা হয়েছে।

এই প্রদর্শন দেখে দর্শকদের আরও একবার মনে হয়েছে আগামী দিন বাংলা থিয়েটারে ভাস্করদের রাজই চলবে। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ছোটদের ফার্স্ট হতে হয়’ পরিচালনায় আবৃত্তিকার ও আবৃত্তি প্রশিক্ষক শুভশ্রী বিশ্বাস। এই আবৃত্তির অনুষ্ঠানটি ঐরকম মানের নাটকের পর হলেও এর উপস্থাপনার গুণ দর্শককে বেশ মাত্রায় আকৃষ্ট করে রেখেছিল সেটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে। এই দিনও শেষ হয় ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি র নৃত্য বিভাগের দ্বারা পরিবেশিত সৃজনশীল নৃত্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সৃজন উৎসবের প্রথম দুটি সন্ধ্যায় প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটালেও রুদ্ধ করে দিতে পারেনি। প্রথম দিন হালকা ঝড়ো হওয়া বৃষ্টিতে সামান্য ক্ষতি হলেও দ্বিতীয় দিনের প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে কয়েকশো দর্শককে সৃজন উৎসবের বাধা মঞ্চের সামনে আবদ্ধ রেখে দিয়েছিল এবং উৎসবের উপস্থাপনার গুনে তারা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান দেখার জন্য শেষ পর্যন্ত থেকে গেছে এবং অনুষ্ঠান শেষ হবার পরেও প্রায় ঘন্টাখানিক মানুষ বৃষ্টিতে আটকে থেকেছে কিন্তু একটি মুহূর্তের জন্য বিরক্তি প্রকাশ করেনি। দর্শকদের এই মানসিকতাকে সংস্থার পক্ষ থেকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে সংস্থার সম্পাদক ও অনুষ্ঠান সঞ্চালক পার্থপ্রতিম দাস এর পক্ষ থেকে। শেষ দিন রবিবার সকাল দশটা থেকে শতাধিক শিশু কিশোর উপস্থিতিতে ও অংশগ্রহনে সংগঠিত হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’। এদিন সন্ধ্যা ছটা থেকে শুরু হয় সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান সংস্থার নৃত্য কুশীলবদের দ্বারা পরিবেশিত ‘কত্থক নৃত্য’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। তারপর শিশু-কিশোরদের পাঁচমিশালী বা নানা রঙের নৃত্যানুষ্ঠান।

এই নৃত্য অনুষ্ঠান গুলোর মধ্য দিয়ে ছোট বড়দের শুধু বিনোদন পৌঁছে দেওয়া নয় প্রতিধ্বনির পক্ষ থেকে বিশেষ করে নৃত্য প্রশিক্ষক শ্রীমতি মাম্পি দাস পাল এমন কিছু সংগীত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিশুদের সার্বিক বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে শিশু মনন, শিশু মানসিকতা বুঝতে, শিশুদের নিজেদের মতন করে থাকতে বেড়ে উঠতে,শিশু বোধ, শিশু চেতনা বিকাশে প্রতিহত না হয় তার প্রতি নজর রেখে দর্শকাসনে বসে থাকা বড়দের শিক্ষা দিয়েছে। ঠিক একই রকম ভাবে বড়দের ক্ষেত্রেও নৃত্য শৈলীতে অভিনবত্ব থেকেছে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রাদেশিক নৃত্য সৃজনশীল আঙ্গিকের বৈচিত্র্যময় এবং উপস্থাপনায় বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। শুধু নৃত্যর মাধ্যমে এতো সংখ্যক কে দীর্ঘ সময় আকৃষ্ট করে রাখা যায় এটা নিয়েও নতুন ভাবে ভাবনায় ফেলবে নিশ্চয়ই। আর এতো নাচ, এতো কলাকুশলীদের (১২৫‌ জন) নিয়ন্ত্রণে রেখে শৃঙ্খলিত করে বিগত কয়েক মাস ধরে প্রায় চল্লিশ উর্ধ্বে নাচ নির্মাণ কাজ যে সম্পন্ন করেছে সে সংস্থার নৃত্য গুরু, নৃত্য প্রশিক্ষক, নাট্য অভিনেত্রী শ্রীমতি মাম্পি দাস পাল। পোশাক,প্রপস,রুপ সজ্জা সবক্ষেত্রেই ভাবনা-সৃজনের পরশ লাগিয়েছে সেই। শ্রীমতি মাম্পি দাস পাল শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের নয় তাদের অভিভাবকদেরও একাধিক নৃত্যের মাধ্যমে সৃজন মঞ্চে টেনে নৃত্য দোলায় দুলিয়ে ছেড়েছেন। নৃত্য পরিবেশন করতে পেরে তাঁরাও খুশি। শ্রীমতি মাম্পি দাস পাল সংস্থার তাঁর পিতৃ তুল্য পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয়টি পরিবারকে নৃত্যে সামিল করে সৃজন উৎসবের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তিন থেকে ষাট সৃজনে মিলিয়ে দিয়েছেন মাম্পিদের মতো নির্মাতারা।

আরো যারা নির্মাতা হিসেবে ছিলেন, অভিজিৎ ভৌমিক, তরুণ নৃত্য শিল্পী অলীক সাহা ও সুজয় ঘোষ। আর তাঁদের সহযোগিতা করেছেন রুমকি, স্বর্নালী,মধুশ্রী, বিদিশা,পাপ্পু, প্রিয়ারা। শঙ্কর বিশ্বাসের হাতে তৈরি প্রপস্ গুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে,আলোক ভাবনায় ছিলেন পার্থ প্রতিম রায়, আর আলোক প্রক্ষেপণে- নয়ন,সৌভিক,রুপম, আবহাওয়া নির্মানে রাহুল মিত্র ও রুপম মন্ডল। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সংস্থার সম্পাদক পার্থপ্রতিম দাস। সম্পাদক তার বক্তব্যে ২৯ বছরের সাংস্কৃতিক চর্চা ও,তার ধারাবাহিকতা তুলে ধরেন, সারাবছর ধরে নাট্য মুকাভিনয়-সংগীত-নৃত্য-অংকন-আবৃত্তি সৃজন করে সেটাই সৃজন উৎসবে উপস্থাপনা করায় সৃজন উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ও মাহাত্ম্য তাও বিশদে ব্যাখ্যা করেন। উপস্থিত সকলকে, সর্বস্তরের সদস্য-সদস্যাদের, ছাত্র-ছাত্রী তাদের অভিভাবকগণকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে প্রতিধ্বনির পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে, সংস্কৃতি চর্চায় পাশে থাকার আহ্বান রেখে সভাপতি জয়দেব হালদার সৃজন উৎসব ২০১৪ এর সমাপ্তি ঘোষনা করেন। আর শেষ হয় প্রতিধ্বনি পরিবারের ছয় থেকে ৭০র্ধ্ব সকল সদস্য-সদস্যাদের উপস্থিতিতে ফ্রেমবন্দি করার মধ্য দিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *