আপোসহীন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, আপনার এলাকার টাটকা সংবাদ পরিবেশনে সর্বদা দায়বদ্ধ।

অনুষ্ঠানজেলার খবর

প্রেমের বর্শি গিলে সর্বস্ব খুইয়ে আজ পথে বসা কোলা গ্রামের ‘দীপক’ এখনও চেয়ে আছে ‘পপির’ ফিরে আসা পথের দিকে

(বিবাহ বাসরে দীপক-পপি দম্পতি )

পারফেক্ট টাইম ওয়েব ডেস্ক : সরল সোজা গ্রাম্য ছেলে দীপকের ক্ষণিকের আনন্দে ভরা জীবন আজ ডুবে গেছে নিরানন্দের নিথর তীমিরে। তার চঞ্চল জীবনে এসেছে অবাঞ্ছিত রিক্ততা। মনে আর শান্তি নেই, নেই পথ চলার আবেগ। চিরতরেই যেন বিদায় নিয়েছে তার মধুমাখা সেই চেনা ছন্দ। কখন যেন থেমে গেছে তার হৃদয় বীনার সুর-ঝঙ্কার। প্রথম দর্শনেই পপির সঙ্গে প্রেম তারপর স্বল্প সময়ের ভালবাসা, তিন দিনের মধ্যেই হয়ে গেল বিয়ে। বেশ চেনা ছন্দেই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। ‘দীপক-পপি’ দম্পতি যেন ভাসছিল প্রেমের অমোঘ জোয়ারে। এ বছরের ২২শে মাঘ বিয়ে হয় ওদের। তারপর কখন যে কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ‘দীপক-পপি’ জুটির হৃদয় বীনার তার ছিঁড়ে যায় বুঝতেও পারিনি ‘দীপক’।

( ছোট ভাইয়ের সাথে কুমারী পপি )

বিয়ের মাত্র তিন সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই ভালবাসার ষোলকলা দেখিয়ে স্ত্রী পপি সরকার(১৮) কয়েক লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার দামী শাড়ী রুপোর গয়না, দামী মোবাইল ইত্যাদি আদায় করে নেয় স্বামী দীপক মন্ডল(৩১)এর কাছ থেকে। তখনও দীপক বিন্দুমাত্র বুঝতেই পারিনি যে সে ‘পপির’ পাতা প্রেমের বরশি গিলে ফেলেছে। একেই তো পাত্রী আকালের বাজার, তারপর দীপকের থেকে পপি দেখনায় অনেকটাই সুন্দরী হওয়াই অত সাত-পাচ না ভেবে স্ত্রীর মন পেতে সাধ্যের বাইরে যেয়েও কোন কিছু চাওয়ার সাথে সাথেই দু’হাত উজাড় করে দিচ্ছিল দীপক। তখনও ‘দীপক’ বিন্দুমাত্র বুঝতেই পারিনি ‘পপি’ আসলে তার নয়। সে যে বিয়ের নাটক করে সর্বস্ব লুট করতে এসেছে ঘুনাক্ষরেও বুঝার সুযোগই দেয়নি ‘পপি’।

  ( কুমারী পপি )

প্রেমের ফাঁদে পড়ে স্ত্রীর দ্বারা প্রতারিত হবার ঘটনাটি ঘটেছে বাগদার রনঘাট অঞ্চলের কোলা গ্রামে। জানা গেছে, ‘দীপক’ একজন নির্মান শ্রমিক, রাজমিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি নিজের আড়াই বিঘা এবং অন্যের থেকে লিজ বা চুক্তিতে নেওয়া দেড় বিঘা মিলে মোট চার বিঘা জমি চাষাবাদ করে সে। একজন মধ্যবিত্ত হিসেবে বেশ ভালোই কাটছিল তাদের সময়। সংসারের খরচ চালিয়ে উদ্বিত্ব হওয়া পাঁচ হাজার ও একটা জমি লিজ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে তোলা পঞ্চাশ হাজার মিলিয়ে মোট পঞ্চান্ন হাজার নগত টাকাও ছিল স্ত্রী পপির আলমারীতে। সেখানে ছিল সোনার চেন, সোনার মঙ্গলসুত্র, কানের দুল, নাকফুল, শাখা বাঁধানো, আংটি মিলিয়ে প্রায় এক লাখ আশি হাজার টাকার স্বর্নালঙ্কার।

(দীপক মন্ডল)

ছিল হাত ও পায়ের ছয়টি আংটি মিলিয়ে নয় হাজার টাকার রৌপ্যলঙ্কার, কমপক্ষে ছাব্বিশ হাজার টাকার শাড়ী, পোশাক ও কসমেটিক সহ সাড়ে দশ হাজার টাকা মুল্যের একটা মোবাইল ফোন। সব মিলিয়ে মোট প্রায় আড়াই লাখ টাকার বুজ নিয়ে পালিয়ে যায়। তার আগে এক লাখ দশ হাজার টাকার পপির দেনাও মিটিয়েছিল দীপক। প্রায় তিন লাখ ষাট হাজার টাকার সাথে নির্ভেজাল ভালবাসা মন গলাতে পারিনি পপির। সে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নির্মান শ্রমিক দীপকের উপর বিভিন্ন ভাবে নাকি প্রান নাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে যাতে এ ব্যাপারে কোন রকম ভাবে থানা কোর্ট না করা হয় এমনটাই জানিয়েছে ‘দীপক’। ‘পপি’ লুট করে পাঠিয়েছে দীপকের সর্বস্ব। শুধুই জমিটুকু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই দীপকের।

(পপি যখন কুমারী)

এক প্রকার পথের ফকির হয়ে আজ সে পাগলের মত ঘুরছে পথে পথে। অভাগা ‘দীপক’ জমি লিজের টাকা ও লোনের কিস্তির চাপে এখন পাগল প্রায়।আইনি লড়াই করে পপিকে ফিরিয়ে আনার মত কোন পুঁজিও নেই তার কাছে। তারপরও অব্যহত রয়েছে ‘পপিদের’ হুমকি, দীপক যাতে এ ব্যাপারে থানা কোর্ট না করে। এই মূহুর্তে ‘দীপক-পপির’ বিয়ের যোগাযোগকারীরাও এখন চেষ্টা করছে এই ঘটনার মধ্য থেকে নিজেদেরকে আড়াল করতে। এমতাবস্থায় কি করবে ‘দীপক’ এখন ? অর্থনৈতিক ভাবে সর্ব্বশান্ত নির্মান শ্রমিক দীপকের পাশে এখন আর কেউ নেই। শান্তি নেই তার আজ ঘরে ও বাইরে। যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে তার মাথায়। এমনি একটা অবস্থার মধ্যে পড়েও স্ত্রীর কাছে স্বামীর করুন আর্তি, “তুমি ফিরে এসো ‘পপি’, তোমার জন্য অকৃত্রিম আনন্দ আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ডালি সাজিয়ে আজও স্বযত্নে সংরক্ষন করছি আমার হৃদয়ের সঞ্চয়ে।

তুমি বিহনে হয়তো এভাবেই আজীবন যক্ষের ধনের মত আগলে রাখবো, আমার এই হৃদয়ের মনিকোঠায়”। আবেগ ভরা কন্ঠে অস্ফুটস্বরে দীপকের মুখ থেকে বেরিয়ে এল, “যান ‘পপি’ আমি না আজও তোমাকে এতটুকু অ-বিশ্বাস করার কথা যেন ভাবতেও পারি না, মানতে পারিনা যে আমি ঠকেছি, আর আমি না ঠকে তোমায় এভাবে চিনতেও চাই না…!! এখনো প্রতিক্ষার অপলক দৃষ্টি নিয়ে তোমার ফিরে আসার পথের দিকে চেয়ে আছি, কখন তুমি ফিরে আসবে ‘পপি’ আমাদের ঘর আলোকিত করতে ?? 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *