জেলার খবরবিনোদন

মঞ্চস্থ হল নাটক “যখন পঁচাত্তর”

নীরেশ ভৌমিক : গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৩ সন্ধ্যায় ঠাকুরনগর সাংস্কৃতিক পরিষদের ঘরে প্রদর্শিত হলো এসময়ের অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি অঙ্গন মঞ্চের নাটক “যখন পঁচাত্তর”। বাদল সরকার নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নতুন নাটক। নাটকের পোস্টারে চোখ রাখলে দেখা যায়— লেখা “শুরু হোক আবার স্বাধীনতার জন্য লড়াই”।

নাটকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, আমাদের দেশ ৭৫ বছরের স্বাধীনতা বর্ষ অতিক্রম করেছে কিন্তু আমরা কি প্রকৃত স্বাধীনতা পেয়েছি? খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা কোন ক্ষেত্রে আমাদের আকাঙ্ক্ষা আমাদের স্বপ্নপূরণ হয়নি। সাধারণ সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে দেশের সাধারণ মানুষ বঞ্চিত। উপরন্তু তাদের উপর চলছে অমানুষিক নির্যাতন।

প্রতিবাদ জানালেই তাকে দেশদ্রোহী তকমা দিয়ে বিনা বিচারে আটকে রাখা হচ্ছে। জাতপাত ধর্মের নামে মানুষে মানুষে হিংসা ও দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রবণতা হোল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকৃত বিপ্লবীদের আত্মত্যাগকে অস্বীকার করে,

তাদের জায়গায় যারা ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো, তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আসনে বসানো হচ্ছে। “যখন পঁচাত্তর” নাটকের পটভূমি আন্দামান সেলুলার জেল।

যেখান থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী উল্লাসকর দত্ত সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের নাম ও ছবি সরিয়ে সেখানে কেবলমাত্র সাভারকারের মূর্তি স্থাপন ও ছবি লাগানো হয়েছে। যে ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলো।

নাটকে একদল পর্যটক আন্দামানে গেছে। যাদের সাথে একটি মেয়ের সাক্ষাৎ ঘটেছে যে আন্দামানে এসেছে কেবলমাত্র ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীদের জেলকুঠরি দেখতে। কি সেখানে কারো নাম বা ছবি দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাকি পর্যটকদের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে।কেন এমন হচ্ছে?


এই নাটকের মূল বক্তব্য উঠে এসছে একটি কাল্পনিক চরিত্রের মাধ্যমে। যার নাম “পঁচাত্তর”। সেই পর্যটক ও জিজ্ঞাসু মেয়েটির প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। এবং সবশেষে সম্মিলিত প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়ে নাটক শেষ হয়েছে। এককথায় এই সময়ের সবচেয়ে জলন্ত বাস্তবতা প্রতিভাত হয়েছে এই নাটকে।


তবে এই নাটকে মেয়ে চরিত্রটা বাদে বাকি সব অভিনেতাদের বয়স ৭০ ও তদউর্দ্ধে। তথাপি সকলের অভিনয় খুবই বলিষ্ঠ। ঠাকুনগর সাংস্কৃতিক পরিষদের ঘরে অনুষ্ঠিত এই নাটকে যথেষ্ট দর্শক সমাগম হয়। আর বাদল সরকার নাট্যচর্চা কেন্দ্র তাদের নাটক “যখন পঁচাত্তর” এর মাধ্যমে দর্শকমণ্ডলীকে আগ্রাসমান ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে গেলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *