সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হল গোবরডাঙা রূপান্তরের ২৫ তম নাট্য উৎসব
নীরেশ ভৌমিক : ১৯৭৩ থেকে ২০২৫ এই ৫১ বছর অতিক্রম করে গত ২৬শে ডিসেম্বর ৫২ বছ২৬শে ডিসেম্বররে পা দিল রূপান্তর। অদ্যবধি তারা অব্যাহত রেখেছে তাঁদের নাট্যচর্চা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ – ২৪ ও ২৫ শে ডিসেম্বর ২৫ তম নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে গোবরডাঙা পৌর টাউন হলে।
রূপান্তর এর নাট্য গুরু শ্যামল দত্ত বলেন, এ উৎসব তাদের প্রানের উৎসব। এই উৎসবে প্রতি বছর কলকাতার কোনো না কোনো নাট্য ব্যক্তিত্ব আসেন উৎসবের মান বৃদ্ধি করার জন্য। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবছর ২৩ শে ডিসেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোবরডাঙা পৌর সভার পৌর প্রধান মাননীয় শঙ্কর দত্ত মহাশয় , শ্রী অভিজিৎ চ্যাটার্জী আধিকারিক – ই , জেড , সি , সি
উপস্থিত ছিলেন অধিকারী কৌশিক বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্দেশক এবং গোবরডাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ শ্রীমতি পিংকি ঘোষ মহাশয়া।গোবরডাঙা টাউন হলের বাইরে রূপান্তর এর সদস্য – সদস্যাগনের উৎসব আঙ্গিকে সাজানো প্রশংসার দাবি রাখে । ঘড়ি ধরে ঠিক বৈকাল ৫ টায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উৎসবের সূচনা হয় । তারপর পরপর রবীন্দ্র নাট্য সংস্থার প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে বলাই মঞ্চস্থ হয়।
নির্দেশক বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য এরপরে টাকীর আমরা অমলকান্তির প্রযোজনা জনগণ একক অভিনয় দর্শকদের মন ভরিয়ে দেয় এই নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন রূপা ব্যানার্জি এদিনের শেষ নাটক তারাপদ বসিরহাট কিংশুক প্রযোজনা মুকুন্দ চক্রবর্তীর নির্দেশনা । দ্বিতীয় দিন ২৪ শে ডিসেম্বর ৫টা ৩০ মিনিটে উৎসবের সূচনায় প্রথম প্রযোজনা কাকদ্বীপ নোনা থিয়েটারের নাটক সম্পর্ক প্রয়োগ দেবাশিস মান্না এরপর গোবরডাঙা রূপান্তর এর শিশু কিশোর দের নাটক ডানপিটে রচনা নন্দ দুলাল বসু নির্দেশনা ও সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রতাপ সেন ।
এতো দাপটের সঙ্গে সারা মঞ্চ জুড়ে সাবলীল অভিনয় শিশু কিশোরদের , আমাদের বহু দিন মনে থাকবে । এই নাটকে প্রত্যেকে ভালো অভিনয় করেছে বলে আলাদা করে কারোর নাম করলাম না শুধু নির্দেশক প্রতাপ সেন কে ধন্যবাদ নাট্য জীবনের ৫৪ বছর ধরে শিশু – কিশোরদের একটার পর একটা নতুন নাটক দর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য । অসাধারণ সুন্দর একটা নাটক দেখলাম।
দ্বিতীয় দিনের শেষ নাটক বার বার ফিরে আসি কাঁচরাপাড়া ফিনিক প্রযোজনা নির্দেশনা কাবেরী মুখার্জি সামগ্রিক পরিকল্পনা কনক মুখার্জি । তৃতীয় দিন অর্থাৎ ২৫ শে ডিসেম্বর রূপান্তর এর জন্ম দিন। এইদিনে সকালে একটা বড় কেক কেটে দিনের সূচনা হয় । তারপরে সকাল ১০টায় স্কুল ভিত্তিক থিয়েটার শুরু হয় ।
সর্ব প্রথম যে বিদ্যালয় নাটক পরিবেশন করেন মেদিয়া ছাত্র কল্যাণ বিদ্যাপীঠ তাদের নাটক মানুষের লড়াই রচনা ও পরিচালনায় কমল কৃষ্ণ পাইক দ্বিতীয় প্রযোজনা যদিও সন্ধ্যা রচনা মৈত্রেয়ী দাম নির্দেশিকা সুমিতা চক্রবর্তী প্রযোজনা মেদিয়া বালিকা বিদ্যালয় তৃতীয় প্রদর্শন বোকা স্বপ্ন রচনা ও নির্দেশনায় সুশান্ত বিশ্বাস পরিবেশন করেছেন চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবীথি
চতুর্থ নাটক শেকল রচনা ভাস্কর রায় প্রযোজনা পশ্চিম জয়নগর জয়ন্তীচরণ বিদ্যালয় নির্দেশক বিধান চন্দ্র হালদার এবং সকালের শেষ অর্থাৎ পঞ্চম নাটক পাঁচপোতা নরেন্দ্র শিশুতীর্থ তাদের নাটক বাঁশি রচনা মহম্মদ আরিফ নির্দেশনা কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস ।আসলে প্রত্যেকটা বিদ্যালয় যে নিষ্ঠার সঙ্গে নাটক পরিবেশন করেছেন তাতে সব স্কুল কে ধন্যবাদ ।
রূপান্তর এর পক্ষ থেকে সমস্ত অংশগ্রহণকারী বিদ্যালয় কে রূপান্তর স্মারক সম্মান প্রদান করা হয় এবং অভিনেতা অভিনেত্রী ছাত্র ছাত্রীদের প্রত্যেক কে প্রায় শতাধিক মেডেল পড়ানো হয়। এরপর সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে ঠিক ৫ টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় হরিপাল নাট্যপ্রহরীর পূর্ণাঙ্গ নাটক শেষ বিচার রচনা মলয় ঘোষ নির্দেশনা পুলক রায় এরপর উৎসবের শেষ নাটক রূপান্তর প্রযোজনা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে সৌদামিনী নির্দেশক অভিক দাঁ ।
আসলে রূপান্তর এর উৎসবে রূপান্তর এর নাটক দেখার জন্য সারাটা বছর অপেক্ষা করে থাকি ভালো অভিনয় নাটক দেখার জন্য। প্রত্যেকের অণঞভিনয় মনে দাগ কাটে । আলাদা করে কারোর নাম করলাম না। সবাই খুব ভালো অভিনয় করেছেন । আসলে রূপান্তর নাট্য উৎসব মানে ভালো নাটকের মেলা । এই উৎসবে তেরোটা নাটকের মঞ্চায়ন হয়েছে সব নাটক গুলোই খুব খুব খুব ভালো লাগলো ।
পরিশেষে একটা কথা বলি যেখানে আশির ঊর্দ্ধে শ্যামল দত্ত , শশাঙ্ক শেখর দত্ত তারপরে আশীষ পাল , প্রভাত দত্ত এনাদের ছত্রছায়ায় তিন বছরের সদস্য অর্থাৎ চারটে প্রজন্মের কাজ একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে তাই আমার মনে হয় রূপান্তর যুগ যুগ ধরে আরো আরো মহীরুহ বিস্তার করবে।সর্বশেষে রূপান্তর এর সভাপতি শশাঙ্ক শেখর দত্ত মহাশয় টাউন হল পরিপূর্ণ দর্শকদের সামনে অনুষ্ঠানের সাফল্যের জন্য সবাই কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।।