“আদর্শ শিক্ষকের মূল চাবিকাঠি: সততা, পাণ্ডিত্য ও জ্ঞান”

ড. বাসুদেব মণ্ডল : শিক্ষক মানে কেবল জ্ঞানের বাহক নন; তিনি আসলে একজন স্থপতি, যিনি একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে ভিত্তি গড়ে দেন। শিক্ষকতা কোনো সাধারণ পেশা নয়, এটি এক মহান ব্রত। সেই ব্রত পালনের জন্য শিক্ষকের যে গুণাবলীর প্রয়োজন, তার মূল তিন স্তম্ভ হলো—সততা, পাণ্ডিত্য ও জ্ঞান। প্রথমত, শিক্ষকের মূল ভিত্তি সততা। এটি কেবল আর্থিক সততার সীমায় আবদ্ধ নয়; বরং জ্ঞান ও নৈতিকতার প্রতি সৎ থাকার মধ্য দিয়েই এর পূর্ণতা আসে।

নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করার মধ্যেও শিক্ষকের সততা প্রকাশ পায়। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে ভুল তথ্য না দিয়ে সঠিক তথ্য অনুসন্ধানের প্রতিশ্রুতি তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতাকে অটুট করে। এই সততাই শিক্ষককে পক্ষপাতহীন করে তোলে এবং সকল শিক্ষার্থীকে সমান দৃষ্টিতে দেখার শিক্ষা দেয়। এরপর আসে পাণ্ডিত্য। একজন শিক্ষক কেবল পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; তাঁকে নিজের বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে হবে। যে শিক্ষক পাণ্ডিত্যপূর্ণ, তিনি শুধু তথ্য দেন না—তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন জাগান, কৌতূহল উসকে দেন, জ্ঞানকে আনন্দময় করে তোলেন।

পাণ্ডিত্যই শিক্ষকের আত্মবিশ্বাসকে মজবুত করে এবং তাঁকে শিক্ষার্থীদের যেকোনো জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম করে। সবশেষে, শিক্ষককে পূর্ণতা দেয় জ্ঞান। জ্ঞান মানে কেবল নিজের বিষয় নয়, সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সমকালীন বিশ্বের স্রোত সম্পর্কেও সচেতন থাকা। এই বিস্তৃত জ্ঞান শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে। জ্ঞানী শিক্ষক শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতি দেন না, তিনি জীবন প্রস্তুতির পথও দেখান।

তাঁর হাতে শিক্ষার্থীরা শিখে বিশ্লেষণ করতে, সমালোচনামূলক চিন্তা গড়ে তুলতে এবং নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠা করতে। অতএব, সততা চরিত্রকে দৃঢ় করে, পাণ্ডিত্য শিক্ষাদানকে কার্যকর করে, আর জ্ঞান শিক্ষাকে দেয় নতুন মাত্রা। এই তিন গুণের সমন্বয়ে শিক্ষক হয়ে ওঠেন প্রকৃত গুরু—যিনি কেবল ক্লাসরুমে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার আলো জ্বালান। একজন সৎ, পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও জ্ঞানী শিক্ষকই পারেন একটি জাতিকে সঠিক পথে চালিত করতে এবং ভবিষ্যৎকে আলোকিত করতে।









