জেলার খবরবিনোদন

গোবরডাঙা মৃদঙ্গমের নতুন প্রযোজনা ‘আমি নটী’

নীরেশ ভৌমিক : পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে মানুষরূপী প্রাণী, পুরুষ ও নারী একসাথেই বসবাস করত। যেদিন থেকে পুরুষ মানুষ তাদের কাম, লোভ, ক্ষমতা বুঝতে শুরু করল তখন থেকেই তারা মনে করতে লাগল নারী মানুষরা তাদের থেকে দুর্বল বা কম ক্ষমতাশালী আর তার ফলস্বরূপ পুরুষরা নারীদের উপর বলপূর্বক ক্ষমতা প্রদর্শন করবার চেষ্টা শুরু করে দিল। ধীরে ধীরে তৈরি হলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যেখানে নারীদের ভালোবাসা ভালোলাগার কোন মূল্যই থাকলো না নারীরা হয়ে উঠল পুরুষদের ভোগ্য বস্তু, মনোরঞ্জন ও সন্তান জন্ম দেওয়ার একটা যন্ত্র বিশেষ।

পুরুষরা মনে করেন নারীদের কোন মন নেই, সমাজের মাথা উঁচু করে চলবার ক্ষমতাও নেই । যুগ যুগ ধরে এই পুরুষরাই সমাজে সৃষ্টি করে চলেছে অসংখ্য নটি বা বেশ্যা। কোন নারী জন্ম থেকে বেশ্যা হয়ে জন্মায় না। এটা যে শুধু মনুষ্য সমাজেই এই নারীর নটির প্রচলন তা নয়। পৌরাণিক কালে দেবতাদের সভাতেও এই নোটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সমুদ্র কন্যা উর্বশীর ইন্দ্রের সভাতে সকলে মনোরঞ্জন করাই ছিল যার কাজ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেককে খুশি করতে হয়েছিল, সে তার স্বন্তানের পিতার পরিচয় দিতে পারিনি। ঐতিহাসিককালেও বিভিন্ন রাজ- রাজত্বে নারীর এই করুন ব্যঞ্জনার কাহিনী লক্ষ্য করা যায়।

গ্রীক নায়িকা হেলেন, মহাভারতে দ্রৌপদী এবং রামায়ণের সীতা, যাদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল পৃথিবী বিখ্যাত সব যুদ্ধ। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ কি শুধুই ছিল কৌরবদের ক্ষমতা প্রদর্শন নাকি লুকিয়ে থাকা সুপ্ত কামুকতা, সীতার অগ্নিপরীক্ষাও সেটা কি পুরুষের পুরুষত্ব দেখানোর অধিকার ছিল না! আর হেলেন সে কি তার নিজের ইচ্ছায় দেশ ছেরেছিল! আজও কোন নারীর পছন্দ অপছন্দ, তাদের ভালোবাসা, ইচ্ছা ইত্যাদির গুরত্ব দিতে নারাজ আজকের দিনের পুরুষরাও।

এই সমস্ত কথার জবাব খুঁজতে বর্তমান সময়ের এক নটি, যে নটীবিনোদিনীকে আদর্শ করে জীবনের পেছনের সমস্ত যন্ত্রণাকে ভুলে নতুন সমাজে সুস্থ ভাবে থিয়েটারকে আঁকড়ে ধরে অভিনেত্রি হয়ে বাঁচতে চায় কিন্তু সে কি আদৌ সেই যুদ্ধে জয়ি হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *