আপোসহীন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, আপনার এলাকার টাটকা সংবাদ পরিবেশনে সর্বদা দায়বদ্ধ।

উৎসবজেলার খবরনাট্যানুষ্ঠানপ্রতিভার সন্ধানেবিনোদনসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

গোবরডাঙ্গা নাবিক নাট্যমের নতুন প্রযোজনা ” নিহত শতাব্দী “

নীরেশ ভৌমিক :- গোবরডাঙ্গা নাবিক নাট্যমের নতুন প্রযোজনা ” নিহত শতাব্দী ” – বর্তমান সময়ের জীবন্ত দলিল। নাটক সমাজের দর্পণ। মানুষ নিয়েই নাটকের কারবার। নাটক সমাজের কাছে এবং জীবনের কাছে দায়বদ্ধ।

এই নাটক অভিনেতাদের জীবন যন্ত্রণার সাথে দর্শকের জীবনযন্ত্রণা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। নাট্যকার গৌতম রায় নিখুঁতভাবে একজন শিল্পীর জীবন যন্ত্রণা এবং তার মূল্যবোধ ফুটিয়ে তুলেছেন তার লেখনীতে।

নির্দেশক জীবন অধিকারী সুনিপুণ দক্ষতায় সম্পাদনা করে একটি আধুনিক থিয়েটার উপহার দিয়েছেন দর্শক বন্ধুদের। স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির কলহ এই নাটকের মূল দ্বন্দ্ব । নাটকের শুরুতে দেখা যায় একজন শিল্পী যখন তার সৃষ্টিতে ব্যস্ত তখন তারই সৃষ্টি মূর্তি হঠাৎ করে কথা বলতে শুরু করে।

শিল্পী তখন আনন্দে বিস্ময়ে চিৎকার করে ওঠে । শিল্পী তার এই সৃষ্টিকে বাজারে নিয়ে যশ, অর্থ এবং মুনাফার স্বপ্ন দেখতে থাকে। যুক্তি তর্ক দিয়ে শুরু হয় স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির দ্বন্দ্ব। সৃষ্টি স্রষ্টার কাছে জানতে চায় – আমায় সৃষ্টি করেছ কেন?

শিল্পী নানান যুক্তি দিতে থাকে কিন্তু মূর্তির কাছে তার সমস্ত যুক্তি অর্থহীন হয়ে পড়ে। সংঘাত চরমে ওঠে শুরু হয় মানবিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিতর্ক। প্রশ্ন উঠে আসে ন্যায়, সততা, বিবেক বুদ্ধি ও ধর্ম নিয়ে। শিল্পীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন স্বরূপ দেবনাথ।

মূর্তির চরিত্রে জীবন অধিকারীর অভিনয় মন্ত্রমুগ্ধে আবদ্ধ করেছে দর্শক শ্রোতাকে। মাত্র দুটি চরিত্রের এক ঘণ্টার এই নাটক দর্শকের পলক ফেলতে দেয় না। পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে একটি অন্য মাত্রার প্রযোজনা এই নিহত শতাব্দী ।

বিশেষ করে এই নাটকের একটি সংলাপ – প্রত্যেক শিল্পী সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। যে শিল্প মানুষের চেতনা বিকাশে, সামাজিক ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে সহায়তা করে না, সে শিল্প প্রকৃত শিল্প হতে পারে না। আশিস দাসের আলোক ভাবনা এই নাটকটি একটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে আস্তিক মজুমদারের আবহভাবনা প্রশংসার দাবি রাখে।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মঞ্চ পরিকল্পনা এই নাটকের প্রাণসঞ্চার করেছে। আলোক প্রক্ষেপণে ছিলেন অশোক বিশ্বাস। আবহপ্রক্ষেপণ করেছেন আবিন দত্ত এবং রাখি বিশ্বাস। ইতিমধ্যেই নাটকটি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে অভিনীত হয়ে চলেছে।

নির্দেশক জীবন অধিকারী জানান এই প্রযোজনাটি তার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল। শ্রদ্ধেয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ( দত্তপুকুর দৃষ্টি ) শ্রদ্ধেয় আশিস চট্টোপাধ্যায় ( গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ন ) এবং শ্রদ্ধেয় আশীষ দাস ( গোবরডাঙ্গা নকশা ) এই নাটকে তাকে বিশেষভাবে উৎসাহ দান করেছে।

গোবরডাঙ্গা নাবিক নাট্যম আবারো প্রমাণ করলেন থিয়েটার অফ ভিলেজ ইজ গোবরডাঙ্গা। গোবরডাঙ্গা নাবিক নাট্যমকে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি সমসাময়িক প্রযোজনা দর্শক মন্ডলীকে উপহার দেবার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *