আপোসহীন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, আপনার এলাকার টাটকা সংবাদ পরিবেশনে সর্বদা দায়বদ্ধ।

অনুষ্ঠানউদ্বোধনজেলার খবরস্বাস্থ্য

আর্সেনিক সচেতনতা শিবির অনুষ্ঠিত হল গাইঘাটার গাজনা কিশলয় তরুণতীর্থে

নীরেশ ভৌমিক :- আর্সেনিক সচেতনতা শিবির হল কিশলয় তরুণতীর্থে। ৬ জুলাই ২০২৫, কিশলয় তরুণতীর্থে অনুষ্ঠিত হলো আর্সেনিক প্রতিরোধ মূলক সচেতনতা শিবির। আর্সেনিক কবলিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার যে কটি ব্লকে আর্সেনিকের মাত্রা ভয়াবহ আকারে রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল গাইঘাটা ব্লক। এই ব্লকেরই কয়েক হাজার লোক এখনো আর্সেনিক আক্রান্ত এবং ইতিমধ্যে আর্সেনিক জনিত দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে অনেকেই।

এমনকি বেশ কয়েকটি পরিবারের সব সদস্যই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ হয়ে গেছে। এরকম একটি ভয়াবহ সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে কিশলয় তরুণতীর্থ, ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারস (ইন্ডিয়া) – সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, দোলা বসু ফাউন্ডেশন ও সোসাইটি ফর টেকনোলজি উইথ এ হিউম্যান ফেস এর মিলিত উদ্যোগে আয়োজন আয়োজন করা হয়েছিল এই একদিনের সচেতনতা শিবির।

উক্ত সংস্থা সমূহের ভাস্কর বসু, ডঃ রাজু বসাক, ডঃ পুষ্পেন্দু মজুমদার, ডঃ তিলক বসু, সৌগত শীল সহ এই শিবিরে বক্তব্য রাখেন রোটারিয়ান ডঃ শৈলেন ভৌমিক, উত্তরপ্রদেশের বালিয়া ওয়াটার সেন্টার এর ডাইরেক্টর ডঃ অভিষেক কুমার, সাথী সংস্থার ডঃ কবিতা মাইতি, আর্সেনিকমুক্ত জল বিষয়ক গবেষক অরিন্দম হালদার ও সুজিত দে।

আয়োজক চারটি সংস্থার নেতৃত্বগণ, তরুণতীর্থের রাজ্য সহ-সভাপতি তপন দাস, আরো বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ক্লাব, স্কুল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ এবং কয়েকজন জনপ্রতিনিধি সহ শতাধিক অংশগ্রহণকারী এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা এই সচেতনতা শিবিরে ভূগর্ভস্থ জল যতটা কম ব্যবহার করা যায় তার উপরে জোর দেন। বলেন- জলের তিনটি উৎস – ভূগর্ভস্থ জল, ভূপৃষ্ঠের জল ও বৃষ্টির জল।

এর মধ্যে কেবলমাত্র ভূগর্ভস্থ জলেই প্রাকৃতিক সেকো-বিষ “আর্সেনিক” পাওয়া যায়। তবে, ভূগর্ভস্থ আর্সেনিক যুক্ত এই জল দিয়ে চাষবাসের মাধ্যমে উৎপাদিত সবজি, ফল-ফলাদির মাধ্যমে এই বিষ মানব শরীরে প্রবেশ করতে করতে ধীরে ধীরে তাদের আর্সেনিক রুগীতে পরিণত করে। শুধু তাই নয়, আর্সেনিকযুক্ত ভূগর্ভস্থ জল দিয়ে ধান চাষ করলে তার খড় যে গবাদি পশু খায় তার দুধেও আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

এছাড়া বক্তারা RO সিস্টেমের ফিল্টার ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেন। এই ফিল্টার ব্যবহারের ফলে প্রাপ্ত জলে টিডিএস এর মাত্রা কমে গিয়ে শরীরে প্রয়োজনীয় মিনারেলস এর ঘাটতি হতে পারে, যা পরবর্তীকালে অনেক রোগ সৃষ্টি করে। তাই RO ফিল্টার ব্যবহার করলেও তাতে যেন টিডিএস এর মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

তবে, মনে রাখতে হবে – এই RO ফিল্টার কিন্তু জলকে আর্সেনিক মুক্ত করতে পারেনা।মধুসূদন কাঠি সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান কালিপদ সরদার জানান- তাঁর সংস্থার উদ্যোগে বড় পুকুর খনন করে তাতে বৃষ্টির জল ধরে রেখে পরে তা বিশুদ্ধ করে বছরের আট মাস পানীয় জলের সমস্যা মেটানো সম্ভব হচ্ছে।

শিবিরে বিভিন্ন বিভিন্ন সংস্থা আর্সেনিক দূরীকরণে কি ধরনের কাজ করে থাকেন, অডিও-ভিডিও সহযোগে তার সবিস্তার ব্যাখ্যা করেন। এছাড়াও গবেষক ও আবিষ্কর্তাগণ আর্সেনিক দূরীকরণের বিভিন্ন রাসায়নিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতি সমূহের বাস্তব প্রদর্শন করে তার কার্যকারিতা ও প্রকৌশল ব্যাখ্যা করেন।

জল বিষয়ক গবেষক সুজিত দে জানান -কিশলয় তরুণতীর্থ ২০০৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এলাকার আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা, সার্ভে ও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল এর ব্যবস্থা করে আসছে। এছাড়াও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সরকারের উদ্যোগের ফলে এলাকায় আর্সেনিক সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফলে বেশিরভাগ পরিবারই এখন আর্সেনিক মুক্ত জল পান করছে। সুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পম্পা পাল তার বক্তব্যে জানান এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সরকারি প্রকল্প অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে।

আশা করা যায় শীঘ্রই জনগণ পানীয় জলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।কিশলয় তরুনতীর্থের সভাপতি – কিশোর কুমার ব্যাপারী জানান যে, এই সংস্থাটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যা ১৯৮৯ সাল থেকে শিক্ষা, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নের কাজে নিযুক্ত।

এই সংগঠন ২০০৪ সাল থেকে এলাকার ভয়াবহ সমস্যা- “পানীয় জলে আর্সেনিক” সম্পর্কিত সচেতনতা ও প্রতিকারের চেষ্টা করে আসছে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংগঠন, ইউনিভার্সিটি ও প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের সহায়তায় এই কর্মসূচি চলছে। এরই অঙ্গ হিসেবে এই সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *