শান্তিপুরের জজ পণ্ডিত বাড়ির দুর্গাপুজোয় দেবী পূজিত হন একাই

পারফেক্ট টাইম ওয়েব ডেস্ক : শান্তিপুরের জজ পণ্ডিত বাড়ির দুর্গাপুজোয় দেবী পূজিত হন একাই কারণ কিংবা কাহিনি জানা নেই। তবে এখানে এলেই দেখতে পাবেন নেই লক্ষী-সরস্বতী, কার্তিক- গণেশ। দেবী পূজিত হচ্ছেন এক্কেবারে একা। এভাবেই নদিয়ার শান্তিপুরের তর্কবাগীশ লেনের জজ পণ্ডিত বাড়িতে চলছে দেবীর আরাধনা। কারও মতে খুব কম করে ৪৫০ বছর ধরে, কারও মতে ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারে দেবীর পুজো হয় শাক্ত মতে। এ পুজোয় বাড়ির সদস্যরাই অংশ নেন পৌরোহিত্যে। এটাই প্রথা। রথের দিন এখানে পাটে সিঁদুর দেওয়া হয়।

বোধন হয় ঠাকুর বাড়ির নিকটবর্তী পঞ্চবটির নির্দিষ্ট আসনে। মায়ের বিরাজ ক্ষেত্রের নিচে এখানে অবস্থান করে পঞ্চমুণ্ডির আসন। দেবী এখানে পুজো পান মহিষাসুরমর্দিনী রূপে। গয়ার যদুয়া গ্রামে একসময় বিরাট জমিদারি ছিল এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। এই পরিবারেরই সুসন্তান পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একই সাথে দেবী লক্ষ্মী এবং দেবী সরস্বতীর কৃপাধন্য। তিনি তর্কবাগীশ উপাধি পান। তাঁর জমিদারির প্রজাদের যাবতীয় সমস্যার বিচারের ভার ছিল তাঁরই ওপর। সনাতন ধর্ম ও শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল এই পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায়ের। প্রজাদের বিচার করা এবং পাণ্ডিত্য – এই দুইয়ের কারণেই ‘জজ পণ্ডিত’ হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর সূত্র ধরেই তাঁর শান্তিপুরের বাড়ি লোক মুখে মুখে হয়ে ওঠে জজ পণ্ডিত বাড়ি।কোনও এক অজ্ঞাত কারণে গয়া থেকে একসময় শান্তিপুরে চলে এসেছিলেন পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায়। শান্তিপুরে এসে তিনি পত্তন করেন নতুন জমিদারির। এখানে এসে তিনি নতুনভাবে শুরু করেন দেবীর আরাধনা। নির্মিত হয় পাঁচখিলান বিশিষ্ট দালান। আজও সেখানেই আয়োজিত হয় মাতৃ বন্দনা।এখানে সপ্তমীতে মোচা, কচুর শাকসহ মরশুমি ফসলের ভোগ থাকে। অষ্টমীতে থাকে সাদাভাত এবং ইলিশ। নবমীতে অন্যান্য পদের সঙ্গে সঙ্গে দেবীকে দেওয়া হয় চালতার অম্বল। দশমীতে পান্তা, কচুর শাক আর কাঁচ কলার বড়া দিয়ে বিদায় জানানো হয় মাকে।

একসময়ে নবমীতে ১০৮ টা মোষ বলি ও ২৮ টা পাঁঠা বলি হলেও বর্তমানে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অতীতে দেবীর পুজা হতো বেলজিয়াম ফানুসের আলোয়। এ বাড়ির পূজোয় এ ছিল এক দেখবার বিষয়। তবে পরবর্তীকালে সেই ফানুস চুরি হওয়ার পর ইলেকট্রিক আলো ব্যবহার করা হয় পুজোয়। এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের ঐশ্বর্যের দিনে প্রজারা পেতেন নানা রকম উপহার। দূর দূরান্ত থেকে আসতেন বহু মানুষ। এই বাড়ির পুজোতে এক সময় এসেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই জজ পণ্ডিত বাড়ির কন্যা নির্মলা দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল শোককাব্য ‘অশ্রু’-র কবি ভোলানাথ বন্দোপাধ্যায়ের। তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে এ বাড়ির দুর্গাপূজায় এসেছিলেন স্বয়ং বিভূতিভূষণ। এ প্রসঙ্গে ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সঠিক সাল তারিখ বলা কঠিন। তবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ বাড়ীর পুজোয় এসেছিলেন। দুর্গা পুজোতে তো বটেই, কালী পুজোতেও। এই পুজোর কথা বলতে গিয়ে জজ পণ্ডিত পরিবারের কন্যা ড. সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায় বলেন, জমিদারি আমলের আড়ম্বর হ্রাস পেয়েছে। তবে ভক্তি, নিষ্ঠা আর ঐতিহ্যের যে পরম্পরা তা আজও অমলিন।










