জেলার খবরবিনোদন

ঠাকুরনগরের সাংস্কৃতিক সংস্থা প্রতিধ্বনি

ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি সাংস্কৃতিক সংস্থা ত্রিশে পা পড়ল ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি সংস্কৃতিক সংস্থা, জন্ম ১৯৯৫ সালের ১৪ ই নভেম্বর শিশু দিবসে। এটি একটি সমসাময়িক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ নাচ, নাট্য, আবৃত্তি, মূকাভিনয় সংগীত চর্চা এবং নৃত্য, অংকন,আবৃত্তি ও যোগা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সংস্থা পরিচালিত শিক্ষা কেন্দ্র গুলির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। উদ্দেশ্য – উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকার একটি জনপদ ঠাকুরনগর, প্রায় ৯৯% ছিন্নমূল, শেষ ভাগে বলি হয়ে ওপর বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তু, এই জনপদের নাগরিক। শিক্ষার সাথে সাথে এই জনপদের আগামী প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক মুখী করে তোলারও উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। সেই লক্ষ্য নিয়ে অবিরাম তিন তিনটি বছর ধরে পথ পরিক্রমায় অনেক ভাঙা-গড়া বা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে লক্ষ্যে অবিচল থেকেছে। অনেকটা সময় পার হয়ে গেলেও বা ধীর গতিশীল হলেও শিশু নাট্য সহ প্রায় ৩৫ উর্দ্ধ নাট্য প্রযোজনা সংগঠিত করার সফলতা দেখিয়েছে।

প্রযোজিত হয়েছে বহু নৃত্যনাট্য প্রাদেশিক ও সৃজনশীল নৃত্য উপস্থাপনা। সারা বছর ধরে চলে থাকে শিশু-কিশোর সহ নৃত্য-নাট্যকর্মশালা, সেমিনার, সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, রবীন্দ্রনাথ নজরুল সন্ধ্যা এবং সৃজন উৎসব নামাঙ্কিত বার্ষিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি।এই সংস্থার অনেক নাট্য তথা সংস্কৃতিক কর্মী সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করে দেশময় ছড়িয়ে পড়েছে, প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আদর্শে অটল থেকে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় এই বার্তা রেখে সাংস্কৃতিক চর্চায় সমাজের অনেককেই উৎসাহিত করেছে। নৃত্য ও নাট্য নিয়ে আমন্ত্রিত প্রর্দশনের জন্য জেলায়, জেলা থেকে রাজ্যস্তরে এবং বহির রাজ্য পরিক্রমা করেছে। আমন্ত্রিত প্রদর্শন থেকে পাওয়া অর্থ তিল তিল জমিয়ে ৭২০ বর্গ ফুটের একটি স্থান ক্রয় করে কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে একটি অস্থায়ী পরিকাঠামো গড়ে তুলে সাংস্কৃতিক ক্রিয়া-কলাপের মহড়া সংঘটিত করে চলেছে।

যেকোনো সংস্থার তরফ থেকে আর্থিক সহযোগিতা না নিয়ে সংস্থা বহু অংশে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সফল হয়েছে- দেশভাগের ফলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া উদ্বাস্তু জনজাতিকে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা সফলতা আনতে সক্ষম হয়েছে কেবলই মতাদর্শের উপরে নির্ভর করে, কঠোর অনুশীলন ও লক্ষ্যে অবিচল থেকে। অতি সম্প্রতি সংস্থার কয়েকটি প্রযোজনা আজকে বাংলা থিয়েটার মহলে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে, চরচিত হচ্ছে- গুরু, কুরবান, ফেলে আসা মেগাহার্টজ। ২০২৪ সালে ভারত সরকারের পরিচালিত ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা পরিচালিত ২৫তম বিশ্বের বৃহত্তম নাট্যোৎসব ‘ভারতরঙ্গম মহোৎসব’ এ এই সংস্থার অত্যন্ত প্রশংসিত নাট্য ‘ফেলে আসা মেগাহার্টজ’ প্রদর্শন করার সুযোগ অর্জন করেছে।

এই বছরই শহর কলকাতা থেকে অনেক দূরে মফস্বল থিয়েটার চর্চায় বিশেষ কৃতিত্ব ও ধারাবাহিকতা রাখার জন্য এই সংস্থাটি ‘অসিত মুখোপাধ্যায় স্মারক সম্মান’এ ভূষিত হয়। গত ১৪ ই নভেম্বর ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি সাংস্কৃতিক সংস্থা তাদের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করে সংস্থা সংলগ্ন অঙ্গনে। অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুসজ্জায় সেজে ওঠে অনুষ্ঠান অঙ্গন, পরিপূর্ণ দর্শক সমাগমে তিল ধারণের জায়গা ছিল না অনেক সাংস্কৃতিক প্রেমী দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সান্ধ্যকালীন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দেখা যায়। সংস্থার তরুণী শিল্পী ঈশা হালদারের উদ্বোধনী সংগীত মধ্য দিয়ে এই দিনের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়। যোগা প্রশিক্ষক তৃষা দাসের পরিচালনায় প্রায় জনা কুড়ি শিশু-কিশোর-কিশোরীর অভিনব ‘যোগা প্রদর্শন’ উপস্থিত দর্শকদেরকে তাঁক লাগিয়ে দেয়।

তারপর এক এক করে অনুষ্ঠিত হয় সংস্থার নৃত্যশিক্ষা কেন্দ্রের নৃত্য প্রশিক্ষিকা শ্রীমতি মাম্পি দাস পাল মহাশয়ার পরিচালনায় কচিকাঁচাদের,কিশোর কিশোরীদের ও সংস্থার ব্যালে ট্রুপসের বৈচিত্র্যময় অনন্য অসাধারণ এক নৃত্য উপস্থাপনা। শুভশ্রী বিশ্বাসের পরিচালনায় ‘ছোটদের ফার্স্ট হতে হয়’ নামাঙ্কিত শিশুদের অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনোগ্রাহী আবৃত্তি অনুষ্ঠান। দর্শকদের মন কেড়ে নেয় শুভশ্রী ও তমাল এর যৌথ আবৃত্তির অনুষ্ঠান। রাজ্যব্যাপী সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর নির্মিত নাট্য ‘একটি আগুনে মৃত্যু’ দর্শকদের নাড়িয়ে দেয়, উপস্থাপনাটি অস্থির-চঞ্চল-অবাধ্য শিশুদের স্তব্ধ করে দেয়। নাট্য নির্দেশনায় ছিলেন সুশান্ত বিশ্বাস, আলো প্রক্ষেপনে ছিলেন পার্থপ্রতিম রায়, প্রযোজনায় ‘ঠাকুরনগর প্রতিবাদী কন্ঠ’। এরপর কাটা হয় প্রবল উন্মাদনার মধ্যদিয়ে ‘ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি’ র ৩০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সুদৃশ্য একটি কেক। শিশু দিবসে শতেক শিশু মিলিত হয়ে কেকটি কাটে। তাদের সহযোগিতা করেন সংস্থার সম্পাদক পার্থ প্রতিম দাস, দিনটি ছিল তারও জন্মদিন।

সংস্থার সম্পাদক পার্থ প্রতিম দাস এর উপস্থিতিতে শিশুদের কেক কাটার অনাবিল আনন্দঘন মূহুর্তটি সেদিনের সকল মুহূর্তগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে! কেক কাটা শেষ হলেই শুরু হয় তমাল,নয়ন,রুপম,অর্নবদের গান। গোটা দর্শক কুলকে মাতিয়ে দেয় ওদের গান। এই দিনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বক্তব্য রাখেন সংস্থার সম্পাদক পার্থপ্রতিম দাস, সভাপতি জয়দেব হালদার,গৌরাঙ্গ মন্ডল ও সুশান্ত বিশ্বাস। সংস্থার অবিরাম তিনটি দশকের পথ চলার অভিজ্ঞতা, চড়াই-উৎরাই, সফলতা-অসফলতার দিকগুলো এবং আগামী দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে বক্তাদের বক্তব্যে ঘুরেফিরেই উল্লেখ হয়। এই দিনের বক্তারা ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনির সকল ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক-অভিভাবকদের, শুভানুধ্যায়ীদের, রাজ্যে,দেশে-বিদেশের থিয়েটার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা,অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এই দিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালিত হয় সংস্থার সভাপতি জয়দেব হালদার কতৃক। তাঁর এই উপযোগী,প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনির ৩০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *