আপোসহীন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, আপনার এলাকার টাটকা সংবাদ পরিবেশনে সর্বদা দায়বদ্ধ।

অনুষ্ঠানউৎসবজেলার খবরবিনোদনসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাড়ম্বরে গোবরডাঙা নাবিক নাট্যমের ২২ তম নাট্য উৎসব পালন

নীরেশ ভৌমিক : নাটকের শহর গোবরডাঙ্গার এক প্রবীণ নাট্যদল গোবরডাঙা নাবিক নাট্যম ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত নাট্য চর্চা করে চলেছে। এই বছর তাদের ২২ তম নাট্য উৎসব সাড়ম্বরে পালন করলেন। নাবিকের নাট্য মিলন উৎসবের তৃতীয় পর্যায় শেষ হলো গোবরডাঙ্গা সংস্কৃতি কেন্দ্রে।

গত ১৫ থেকে ১৭ই মার্চ ২০২৫, তিনদিন ধরে চলে এই নাট্য মিলন উৎসবের তৃতীয় পর্যায়। ফেলে আসা বছর গুলির থেকে এই বছরের নাট্য মিলন উৎসবের তৃতীয় পর্যায়টি ছিল একটু ভিন্ন স্বাদের। কারণ বিভিন্ন বৈচিত্রময় অনুষ্ঠানে ঠাসা ছিল নাবিক নাট্যমের এই নাট্য মিলন উৎসবের শেষ পর্যায়টি।

পরপর তিনটি দিনই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বিকাল ৫:৩০ মিনিটে। সংস্কৃতি কেন্দ্রের উঠোনে আয়োজন করা হয়েছিল এক অপূর্ব স্বাদের গান ও নৃত্যানুষ্ঠানের। তৃতীয় পর্যায়ের প্রথমদিনের অনুষ্ঠান সূচিতে প্রদীপ প্রজ্বলন করে শুরু হয় অনুষ্ঠান, এরপর আয়োজন করা হয়েছিল নাবিক সম্মানের।

এ বছরে নাবিক সম্মানে সম্মানিত করা হয় শান্তি পুরের “বিজন ঘোষ” তিনি একজন প্রবীণ নাট্যকর্মী এবং বলিষ্ঠ সংগঠক, আর ১৯৭৭ সালে নাবিক নাট্যমের ভিত নির্মাণ করেছিলেন যেসব কান্ডারীরা তারই মধ্যে ছিলেন দুজন, প্রথম “সুবীর নারায়ন ঘোষ” ও দ্বিতীয় “সমীর কুন্ডু” সেই দুজনকে “নাবিক সম্মানে” সম্মানিত করা হয়। এরপর ছিল এক অপূর্ব “গৌড়ীয় নৃত্য” পরিবেশনায় ছিলেন রাখী বিশ্বাস নাবিক নাট্যমের বর্তমান সহ সম্পাদিকা।

দ্বিতীয়ত ছিল সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সমবেত রবীন্দ্রসঙ্গীত। এই দিনের বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল “আশীস দাস”, পরিচালক “গোবরডাঙা নকসা “। উঠোনের অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় নাটক, প্রথম দিন ছিল দুটি নাটক, প্রথম নাটক গোবরডাঙা নাবিক নাট্যমের নতুন প্রযোজনা “নিহত শতাব্দী” রচনা “গৌতম রায়” ও সম্পাদনা এবং নির্দেশনায় “জীবন অধিকারী”।

দ্বিতীয় প্রযোজনাটি ছিল আগরপাড়া কালপুরুষের নাটক নির্দেশনায় “রাজা গুহ” । প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি দর্শকের করতালি ও প্রশংসায় শেষ হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান। শেষ পর্বের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা হয় নকসার উঠোনে “শতবর্ষে সলিল চৌধুরী” ওপর এক অদ্ভুত অনুভূতি দেওয়া গানের মাধ্যমে পরিবেশন করেন গোবরডাঙ্গা পরম্পরা নির্দেশনায় রাজু সরকার। তার দলের শিল্পীরা তাঁদের প্রতিটি গান দর্শকের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। মূল পর্বের অনুষ্ঠানে এই দিন ছিল তিনটি নাটক, প্রথম নাটক গোবরডাঙা নাবিক নাট্যম ও মছলন্দপুর ইমন মাইম সেন্টারের কর্মশালা ভিত্তিক প্রযোজনা “দুঃসময়”

যাতে প্রায় চল্লিশ জন কুশীলব অংশগ্রহন করে, পরবর্তী নাটক ছিল দক্ষিণেশ্বর কোমলগান্ধার প্রযোজিত ” “আস্তাকুড়ের রোমিও” নির্দেশনায় “মুরারি মুখোপাধ্যায়” এই দিনের শেষ নাটক ছিল শ্রদ্ধেয়”মনোজ মিত্রের” “তেঁতুল গাছ” প্রযোজনা “গোবরডাঙা চিত্তপট” নির্দেশনায় “শুভাশীষ রায়চৌধুরী”। তৃতীয় দিন অর্থাৎ নাট্য মিলন উৎসবের শেষ পর্বের শেষ দিনে আয়োজন করা হয়েছিল ঐতিহ্যগত বাউল সঙ্গীতের, গায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিল নাবিক নাট্যমের সদস্য সৌরজ্যোতি অধিকারী ও তার দলের শিল্পীরা। সৌরজ্যোতির বাউল গান প্রতিটি দর্শকের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল।

শেষ দিনের শুরুটা ছিল বেশ মনোরম আর এইদিনে নাটক ছিল দুটি প্রথম নাটক বেলঘরিয়া অঙ্গনের “স্যাক্রীফাইস” নির্দেশনায় “অভি সেনগুপ্ত” এবং শেষ প্রজনাটি গোবরডাঙা নাবিক নাট্যমের “দর্পণ” নির্দেশনায় “জীবন অধিকারী”। তিনদিন ব্যাপী এই নাট্য উৎসবে নাবিক নাট্যমের আয়োজন তাদের আতিথেয়তা ও দর্শকের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। নবিকের কুশীলবদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আবেগে তাদের নাট্য মিলন উৎসব ২০২৫ সত্যিই সফলতা অর্জন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *