বিএসএফের মৈত্রী সাইকেল র্যালি টিমকে অনন্য সম্বর্ধনা জ্ঞাপন বিএসএফের ১০৭ ব্যাটলিয়নের কমান্ডেন্ট সুনীল কুমারের
পারফেক্ট টাইম নিউজ পোর্টাল রিপোর্টার ওমর ফারুককের সাথে ক্যামেরায় ইয়াদ আলী মন্ডল : বাগদা, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সৌহার্দ্য এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তির সন্মানে সমগ্র ভারতবর্ষে বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠান ও প্রচার মূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় বিএসএফ আয়োজন করে সীমান্তপথে শিলিগুড়ি থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের অন্যতম স্থল বন্দর পেট্রাপোল পর্যন্ত ৫৫০ কিমি অনবদ্য এক মৈত্রী সাইকেল র্যালি।
এটা আজ বাগদার পদ্মপুকুর চড়ুইগাছি বিএসএফ ক্যাম্পে পৌঁছালে সেখানে উক্ত টিমকে আন্তরিক ভাবে অনন্য সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন, বিএসএফের ১০৭ ব্যাটলিয়নের কমান্ডেন্ট সুনীল কুমার। প্রকৃত কাজের মানুষ ১০৭ ব্যাটলিয়নের কমান্ডেন্ট সুনীল কুমার উপস্থিত গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান কালে সন্মানের সঙ্গে উল্লেখ করেন,বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও তিনি উক্ত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনী সহ বিএসএফের গৌরবগাঁথা কৃতিত্ত্বের কথা।
তিনি অতি গর্বের সাথে বলেন, ১৯৭১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী সেনানায়ক লিখিত ভাবে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগের বিনিময়েই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান থেকে ‘বাংলাদেশ’ নামের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত একমাত্র বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ক্ষমতাসীন পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতা ও হিংসাত্মক কার্যক্রম রোখা সম্ভব ছিল না।
সেই সময় পাক হানাদারদের অত্যাচারে কয়েক কোটি মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারত বর্ষে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। আশ্রিত অসংখ্য মা বোনেদের সুরক্ষার সমস্ত গুরুভার নিজের হাতে তুলে নিয়ে তাদেরকে সুশৃঙ্খল ভাবে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সু-বন্দোবস্থত সহ মুক্তি যুদ্ধাদের ট্রেনিং দেওয়া এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করা সমস্ত কাজ নিপুন হাতে এবং অতি দক্ষতার সাথে করেছিল এই বিএসএফ জওয়ানরাই।
বাংলাদেশের দেশ নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠা বাঙালিরা এ দেশের সেনা বাহিনী ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের ঐকান্তিক সহযোগিতায় স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ। ভারতীয় সেনাবাহিনী তথা বিএসএফের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবাজ্জ্বল অবদানের মাহাত্ম্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পরও স্মরণীয় করে রাখতেই বিএসএফের এই মৈত্রী সাইকেল র্যালি।
বিএসএফের ১০৭ নং ব্যাটালিয়নের সিও সুনীল কুমার জানান, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের দেশ নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবেদনে সাড়া দিয়ে তৎক্ষণাৎ ভারত সরকার সর্ব্বাঙ্গীন ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ২রা ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাক বিমান বাহিনী দেশের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তবর্তী এলাকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে। ফলশ্রুতিতে ৩ রা ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে গভর্মেন্ট অফ ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী ভারতীয় সেনার সাথে বিএসএফের জওয়ানরা বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যায়।
এই ১৩ দিনের যুদ্ধে বিএসএফের ১২৫ জন বীর সর্বোচ্চ বলিদান দেন ৩৯২ জন গুরুতর আহত হন এবং ১৩৩ জন নিখোঁজ হন এই যুদ্ধে ভারত জয় লাভ করেন। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল সমেত ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এস অরোরার কাছে নিঃশর্ত ভাবে আত্ম সমর্পন করেন। সীমান্তে এই গর্বের বার্তা দিতেই এই মৈত্রী সাইকেল র্যালিটি শিলি গুড়ি থেকে শুরু হয়েছে এবং বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে পেট্রাপোল স্থল বন্দরে এসে শেষ হবে।
এই টিমের সম্বর্ধনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বিএসএফের ১০৭ নং ব্যাটালিয়নের সিও সুনীল কুমারের সাথে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সাংবাদিকগন, লোকাল পঞ্চায়েত মেম্বার ও বিএসএফের ডি সি জি রাকেশ শর্ম্মা সহ ১০৭ ব্যাটলিয়নের অধিন বিভিন্ন ক্যাম্পে দ্বায়িত্বে থাকা ইনেস্পক্টরগন। মৈত্রী সাইকেল র্যালিটি সীমান্ত পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে স্থানীয় উৎসুক সীমান্তবাসীরাও পুষ্পবৃষ্টি করে বিএসএফ জওয়ানদেরকে উৎসায়িত ও সন্মানিত করেন।
উল্লেখ্য, সীমান্ত ঘেঁষে এই মৈত্রী সাইকেল র্যালিটি এগিয়ে চলাকালীন ড্রোন ক্যামেরা, পাইলট ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি সহ সীমান্তে কর্মরত বিএসএফরা তাদের সুরক্ষা প্রদান করে।