আপোসহীন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, আপনার এলাকার টাটকা সংবাদ পরিবেশনে সর্বদা দায়বদ্ধ।

অনুষ্ঠানউৎসবজেলার খবরবিনোদন

মুর্শিদাবাদ জেলার মহুলা বিবেকানন্দ সমিতি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল তরুণতীর্থের রাজ্য শিক্ষা শিবির

নীরেশ ভৌমিক : তরুণতীর্থের রাজ্য শিক্ষাশিবিরশিশু কিশোর কল্যাণকামী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তরুণতীর্থের রাজ্য শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত হলো গত ২৭ থেকে ৩০ শে ডিসেম্বর ২০২৪ মুর্শিদাবাদ জেলার মহুলা বিবেকানন্দ সমিতি প্রাঙ্গণে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ৩৫০ জন কিশোর কিশোরী এই শিবিরে অংশগ্রহণ করে। শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নানা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় উপস্থাপন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বহু বিশিষ্টজনের উপস্থিতি ও কিশোর কিশোরীদের শিক্ষামূলক এই আয়োজনটি বছর শেষে সত্যিই একটি সার্থক আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

২৬শে ডিসেম্বর বিকেলে আয়োজক জেলা মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন শাখা আসর থেকে এবং উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রভৃতি জেলা থেকে ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীরা এবং আসর সংগঠক ও অভিভাবকেরা এসে উপস্থিত হন। পরের দিন অর্থাৎ ২৭শে ডিসেম্বর, কুয়াশায় চাদরে ঢাকা শীতের জড়তাকে সরিয়ে, সাদা পোশাকের তিন শতাধিক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শিশু-কিশোর সারিবদ্ধভাবে ও শৃঙ্খলার সাথে শরীর সঞ্চালনের কাজ শুরু করে। তখন থেকেই শিবিরে এক অমায়িক আনন্দ ও উচ্ছলতার পরিবেশ তৈরি হয়।

এরপর সকাল আটটায় পরিবেশ রক্ষা, শিশু ও নারীর অধিকার এবং শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও জীবন বিকাশের জন্য সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলে দেওয়ার দাবি নিয়ে বর্ণাঢ্য পথ-পরিক্রমার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সচেতনতা মূলক আবেদন সহ প্লাকার্ড, ব্যানার, ব্যান্ড, বাঁশি, রণ-পা সহ এই পরিক্রমা এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়।এরপর ওই দিনই সকাল দশটায় পতাকা উত্তোলন এর মাধ্যমে শিবিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্বামী বিশ্বময়ানন্দজী মহারাজ, অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মিশন, সারগাছি। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন রাজ্যসাথী (সভাপতি) অমল নায়েক। স্বামী বিশ্বময়ানন্দজী তাঁর বক্তব্যে বলেন – শিবিরস্থল এই মহুলা গ্রাম থেকেই স্বামী বিবেকানন্দ মানবসেবার জন্য যে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই মিশনের প্রথম সেবার কাজ শুরু হয়েছিল। তাই তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন সমাজসেবামূলক শিশু কিশোর সংগঠন তরুণতীর্থের সেবামূলক কর্মসূচি এই গ্রামে এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আরও সম্প্রসারিত হোক।

অমল নায়েক তাঁর বক্তব্যে জানান-বিগত চার বছর ধরে রাজ্য শিক্ষাশিবির করা যায়নি; কারণ দু বছর (২০২০ ও ২০২১) কোভিড এবং পরের দু’বছর জেলা শিক্ষাশিবির হয়েছে (২০২২ ও ২০২৩)। তাই ছোটদের কাছে তাঁর আহ্বান, এই শিবিরে যা শিখবে সেটা শিবিরে যারা আসতে পারেনি তাদের শেখাতে হবে এবং তরুণতীর্থের শাখা গড়ে তুলতে হবে। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা শ্রীপার্থসারথি দাসগুপ্ত বলেন, “আজ আমি বৃদ্ধ হয়েছি, তবুও তরুণতীর্থের টানে শিবিরে হাজির হই। তরুণতীর্থের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সেই কৈশোর থেকে।

আজ মাঠে নেমে নাচগান, প্যারেড করতে পারি না; তবুও হাজির হই প্রাণের টানে। তোমাদের কাছে আমার প্রত্যাশা তোমরা সংগঠনকে আরো বড় করে তুলবে।” উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল্লা হিল কাফি, সদস্য, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ।অনুরাধা হাজরা ব্যানার্জি চেয়ারম্যান বেলডাঙ্গা পৌরসভা স্বরূপ ঘোষ কর্মাধ্যক্ষ বেলডাঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতি হিরন্ময় ঘোষ সম্পাদক মহুলা বিবেকানন্দ সমিতি এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক ভাস্কর বসু অন্যতম উপদেষ্টা সুবোধ ভৌমিক, সন্তোষ ঘোষ, তপন দাস, মৃণাল গুপ্ত সহ প্রবীর মন্ডল, সুজিত ব্যানার্জি প্রমূখ সংগঠনের রাজ্য নেতৃবৃন্দ।

শ্রীমতি হাজরা ব্যানার্জী তাঁর বক্তব্যে বলেন – আমি নলিনী বাগচি তরুণতীর্থ সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেখানে আমি তোমাদের মত নাচগান, প্যারেড করতাম। আজ কাজের চাপে আমি আসরে যেতে পারিনা। এখানে এসে আমি আপ্লুত হয়ে পরেছি। হিরম্ময় ঘোষ তাঁর বক্তব্য বলেন আমি তরুণতীর্থের বিভিন্ন শিক্ষা শিবিরে অংশ গ্রহণ করেছি। কিন্তু কাজে চাপে ক্যাম্প যেতে পারিনা। শিবির সংগঠিত করতে পেরে আনন্দিত।শিক্ষাশিবির উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে তরুণতীর্থ নামের সাহিত্য ও সংবাদ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

পত্রিকার সম্পাদক তপন দাস একটি করে পত্রিকা মহারাজ সহ বিশিষ্ট অতিথিদের হাতে তুলে দেন।শিবিরে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রুটিন অনুযায়ী দলগতভাবে প্যারেড, পিটি, লোকনৃত্য, ছড়ার ব্যায়াম, দেশাত্মবোধক গানের ড্রিল, যোগব্যায়াম, ব্রতচারী, রায়বেশে নৃত্য ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ পরিচালনার দায়িত্বে ফিল্ড ইন চার্জ- বিশ্বজিৎ তা সহ স্বপন মন্ডল, আবু তালেব, রতন সরকার।প্রতিদিন সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়। প্রথম দিন সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান করে বৃহত্তর কলকাতা জেলা।

এই জেলার অধীন গোবরডাঙ্গা কিশলয় তরুণতীর্থ ও সন্তোষপুরের কল্যাণতরুণতীর্থ সুন্দর অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে, এছাড়া এই দিন মুর্শিদাবাদের নগর ক্ষুদিরাম তরুণতীর্থের পক্ষ থেকে এই জেলার ঐতিহ্যমন্ডিত রায়বেশে নৃত্য পরিবেশিত হয়। দ্বিতীয় দিনও সকাল থেকে বিভিন্ন শারীরিক ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ চলে। এরপর সন্ধ্যায় আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শাখার পক্ষ থেকে চম্পাবতী তরুণতীর্থ, সতীশ স্মৃতি তরুনতীর্থ ও অন্যান্য আসরের অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের দ্বারা এই অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। তৃতীয় দিনে শিবির পরিদর্শন করেন জানে আলাম মিঞা, প্রাক্তন বিধায়ক, বেলডাঙ্গা বিধানসভা। তিনি ছোটদের উদ্দেশ্যে বলেন -“তোমাদের দিকে দেশ তাকিয়ে আছে। তোমরা বড় হয়ে দেশের হাল ধরবে।

আজ যে অস্থির দিন চলছে, যে ভেদাভেদের দিন চলছে তা তোমরাই বন্ধ করতে পারবে।” শেষ দিন অনুষ্ঠান পরিবেশন করে মুর্শিদাবাদ জেলা শাখা, এই অনুষ্ঠান অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মনে যথেষ্ট আনন্দ ও উৎসাহ যোগায়। এ দিনের অনুষ্ঠানের শেষে ক্যাম্প-ফায়ারের মাধ্যমে শিবিরের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। এই সময় শিবিরে উপস্থিত প্রত্যেকের মধ্যে যে আবেগ অনুভূতি ব্যক্ত হয় তা অবর্ণনীয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার চল্লিশটির বেশি শাখা আসর থেকে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক ভাইবোনদের মধ্যে পরিচিতি, বন্ধুত্ব ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ঘটে তার ফলে প্রত্যেকে একে অপরের আত্মীয় হয়ে ওঠে। এই আত্মীয়তার বন্ধন, ঐক্যবদ্ধ শক্তি সত্যিই পারে মানুষ গড়ার মহান দায়িত্বকে সফল করতে। এ যেন সার্থক স্লোগান “তরুণতীর্থ মানুষ গড়ার কারখানা”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *